হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহ মাহমুদ রজভী ইরানের ধর্মীয় শহর কোমের মাসুমিয়া মসজিদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক নৈতিকতা ক্লাসে মানুষের চিরন্তন সুখের জন্য ঐশী জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, মানবিক বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা একা চিরন্তন সুখের পথ নির্দেশ করতে অক্ষম।
সিনিয়র হাওজা শিক্ষক পরিষদের সদস্য বলেন, জ্ঞান মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করে। এই জ্ঞানকে মানুষের অন্তরে গভীর বিশ্বাসে রূপান্তরিত করতে হবে, তবেই তা কার্যকর হবে।
তিনি মানবিক বুদ্ধির সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করে বলেন, দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিরাও বুদ্ধিবৃত্তিক পদ্ধতি ব্যবহার করেও মতবিরোধে পড়েন, কারণ বুদ্ধি মানসিক, শারীরিক ও পরিবেশগত প্রভাব দ্বারা সীমাবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, রোগ বা উদ্বেগের মতো সংকটকালে মানুষের বিচারশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভুলের সম্ভাবনা বাড়ে।
প্রকৃত জ্ঞান লাভে ঐশী প্রত্যাদেশের প্রয়োজনীয়তা
সর্বোচ্চ নেতার বিশেষায়িত পরিষদের সদস্য কুরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ঈমানের মূলনীতিতে—যেমন আল্লাহর অস্তিত্ব বা নবীদের প্রেরণ—বুদ্ধি পথ দেখাতে পারে, কিন্তু জীবনযাপনের বিস্তারিত নির্দেশনার ক্ষেত্রে কেবল ঐশী প্রত্যাদেশই সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়।
এই হাওজা শিক্ষক আরও যোগ করেন, কোনো মানবরচিত মতবাদ দাবি করতে পারেনি যে তা অনুসারীদের পূর্ণাঙ্গ সুখ দান করেছে—এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম ঐশী বিধানভিত্তিক মতবাদ।
সকলের অনিবার্য গন্তব্য: আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন
কোমের হাওজা শিক্ষক পরিষদের সদস্য إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَیْهِ رَاجِعُونَ
(নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাব) আয়াতটি উল্লেখ করে বলেন, সকল মানুষ, ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, আল্লাহর দিকে ফিরে যাচ্ছে। এই যাত্রা অনিবার্য। পার্থক্য কেবল পদ্ধতিতে—কেউ ঐশী জ্ঞান দ্বারা পথ দেখে, কেউবা অন্ধভাবে পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করে।
আয়াতুল্লাহ রজভী সতর্ক করে বলেন, মৃত্যু ও পরকালের স্মরণই মানুষের জীবনের সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা। এই বিশ্বাস অন্তরে গেঁথে গেলে তা আচরণে আমূল পরিবর্তন আনে।
তিনি পরকালীন জীবনের চূড়ান্ত পরিণতির কথা উল্লেখ করে বলেন, এই যাত্রার শেষ হয় চিরস্থায়ী সুখে নয়তো শাস্তিতে। মানুষেরই এখানে পথ বেছে নেওয়ার দায়িত্ব—ঐশী জ্ঞান অনুসরণ করে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানো।
মৃত্যুর স্মরণ: দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্তির উপায়
ইমাম খোমেনী (রহ.) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান কুরআন ও হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা করেন, আল্লাহর সত্যিকার বান্দারা অর্থ-বাণিজ্যেও তাঁর স্মরণ ভুলে যান না। তাদের বাসস্থান এমন, যেখানে ঐশী নূর বিকশিত হয়।
আল্লাহর নেক বান্দাদের বৈশিষ্ট্য:
- তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয়।
- কিয়ামতের দিনের শাস্তিকে ভয় করে।
- দুনিয়ার মোহ তাদের আল্লাহর পথ থেকে টলাতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, নবীদের আল্লাহ 'মুক্ত ও পবিত্র' বলে আখ্যায়িত করেছেন, কারণ তাদের হৃদয়ে পরকালের স্মরণ গভীরভাবে প্রোথিত। এই বিশ্বাসই প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিক পছন্দের সুযোগে পরিণত করে।
মৃত্যুচিন্তা: দুনিয়াপ্রীতির অপনোদনকারী
এই নৈতিকতার শিক্ষক শহীদ ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের উদাহরণ টেনে বলেন, যারা সবকিছু উৎসর্গ করেছেন, তাদের অন্তরে মৃত্যু ও পরকালের বিশ্বাস অটুট ছিল। যেমন—আয়াতুল্লাহ আহমাদী (রহ.) যথাসম্ভব দুনিয়াবি সমাবেশ এড়িয়ে চলতেন, কারণ তা তার আধ্যাত্মিকতায় বিঘ্ন সৃষ্টি করত।
ইউনুস (আ.)-এর জিকির ও প্রেমিকের সিজদা
আয়াতুল্লাহ রজভী সুফি সাধনাপদ্ধতির উল্লেখ করে বলেন, মরহুম আয়াতুল্লাহ কাজী ও মালেকি তাবরিজী দীর্ঘ সিজদায় 'লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা' (হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)—এই জিকিরের প্রতি গুরুত্ব দিতেন। আল্লাহর প্রেমিকরা সিজদার দীর্ঘতা থেকে ক্লান্ত হন না; বরং তা শেষ হতে দেখে দুঃখিত হন। এই আমল আল্লাহপ্রেম বৃদ্ধি করে ও দুনিয়ার মোহ কমায়।
চূড়ান্ত সত্য: সকলের ফিরে যাওয়া আল্লাহর দিকেই
সর্বোচ্চ নেতার বিশেষ পরিষদের সদস্য إِنَّ إِلَیٰ رَبِّکَ الرُّجْعَیٰ
(নিশ্চয়ই তোমার রবের দিকেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে) আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, সকল সৃষ্টির গতি আল্লাহর দিকেই। এমনকি জাহান্নামীরাও তাঁর সামনে হাজির হবে। পার্থক্য এই যে, আল্লাহর অলীরা তাঁকে দেখবেন, আর অন্যদের সামনে তাঁর রহমতের দরোজা বন্ধ থাকবে—যেমন অন্ধ ব্যক্তি সূর্যের আলো দেখতে পায় না।
আপনার কমেন্ট